Saturday, July 21, 2012

রোবোট নিয়ে বিজ্ঞানীরা যেমন আশাবাদী তেমনি সংশয়


আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্ক :
রোবোট নিয়ে বিজ্ঞানীরা যেমন আশাবাদী তেমনি সংশয়ও যেন তাদের পিছু পিছু থাকে। যান্ত্রিক এই মানব ব্যবস্থা মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হলেও মানুষের জন্য যে এরা ক্ষতিকর হবে না তা কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবুুও চলছে গবেষণা। রোবোটের উন্নয়নে মানুষ এখনো যারপরনাই সক্রিয়। রোবোটের ইতিহাস বহু পুরনো। সেই ১২০৬ সালে বিজ্ঞানী আল জাজারি সরল ধরনের রোবোটের কথা উল্লেখ করেছিলেন। উদ্ভাবক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ১৪৯৫ সালে মেকানিক্যাল নাইট নামে এক ধরনের হিউমানয়েড রোবোটের কথা বলেছিলেন। এরপর নানাভাবে বিজ্ঞানীদের মাথায় রোবোটের চিন্তা এলেও ১৯২০ সালের দিকে বাস্তবিকভাবে রোবোট বানানোর কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই গবেষণা গতিশীল ভঙ্গিতে এগোতে থাকে। তবে ১৯৯০ সালের পর কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং ন্যানো প্রযুক্তির বিশেষ উন্নতির পর রোবোটিক গবেষণায় যেন বিপ্লব সূচিত হয়েছে। রোবোটিকসের রয়েছে অনেক শাখা-প্রশাখা। কারণ বর্তমান সময় পর্যন্ত এসে এত বিশাল পর্যায়ের ডাটা রোবোটিকস গবেষণার সাথে জড়িয়ে রয়েছে যে সুনির্দিষ্ট পরিমাণের ডাটাতে মনোযোগী হয়ে গবেষণা না চালালে গবেষণা করাই কঠিন হয়ে পড়ে। রোবোটিকসের শাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে_ অ্যান্থ্রোবটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিহেভিওর বেজড রোবোটিকস, বিম রোবোটিকস, বায়োনিকস, বায়োরোবোটিকস, কগনিটিভ রোবোটিকস, কম্পিউটার ভিশন, ম্যাশিন ভিশন, এপিজেনেটিক রোবোটিকস, ইভলিউশনারি রোবোটিকস, হোম অটোমেশন, হিউম্যান রোবোট ইন্টারেকশন, ইন্টেলিজেন্ট ভেহিকল টেকনোলজিস, ল্যাবরেটরি রোবোটিকস, মাইক্রোরোবোটিকস , ন্যানোরোবোটিকস , রোবোটিক সার্জারি, রোবোট কিনেমাটিকস, রোবোট লোকোমোশন, স্পিচ প্রসেসিং ইত্যাদি। রোবোট পরিচালনার জন্য এবং রোবোট সম্পর্কিত গবেষণা করার জন্য বেশকিছু রোবোটভিত্তিক সফটওয়্যার গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন। এ সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্রোস, ম্যারি, এমআরপিটি, রোবোরিয়ালম, উর্বি, উইবোটস, ইয়ারপ ইত্যাদি। রোবোটের মধ্যে হিউমানয়েড রোবোটের বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ একটু বেশি দেখা যায়। মানুষের আকার-আকৃতি, মানসিক বৈশিষ্ট্যসহ নানারকম বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে এই রোবোটগুলো বানানো হয়ে থাকে। জাপান, আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়ার পাশাপাশি বর্তমানে ইরানও হিউমানয়েড রোবোট নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সমপ্রতি ইরানের তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষকরা সুরেনা-২ নামে এক ধরনের হিউমানয়েড রোবোট উন্মোচন করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের সামনে। জাপানের বিজ্ঞানীরা এই বছরই এমন এক ধরনের হিউমানয়েড রোবোট তৈরি করেছেন যে রোবোটগুলো গান গাইতে পারে এবং নাচতে পারে। তবে রোবোট গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে ফিকশনাল ক্ষেত্রে রোবোটের যে ভয়াবহ রূপ দেখানো হয়েছে তা ভুলে গেলে চলবে না। টার্মিনেটর সিরিজে জেমস ক্যামেরন দেখিয়েছেন ভবিষ্যতে মেশিনের সঙ্গে কীভাবে মানুষের যুদ্ধ বাধে। ম্যাট্রিক্সে দেখানো হয়েছে কীভাবে অপারেটিং সিস্টেম মানুষকে দাস বানিয়ে ফেলে। আইজ্যাক আসিমভ, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন লেখকের লেখনীতে কি করে রোবোট মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ায় তা উঠে আসে। রোবোটের নেগেটিভ বিষয়টি স্টিভেন স্পিলবার্গের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছবিটিতে বেশ ভালোভাবেই এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, রোবোট গবেষণায় সাফল্যের পাশাপাশি রোবোটের ভবিষ্যৎ ভয়াবহতাও মাথায় রেখে মানুষকে কাজ করা উচিত। রোবটিক সিস্টেম এর ব্যবহার মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের লোকেশন নির্ণয় এবং তথ্য ক্যাপচারিংয়ের ওপর নতুন অর্জন করেছেন। মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোমেটেড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক মোহাম্মদ আবদেরাহিম ও তার সহকর্মীরা এ উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত। এ গবেষণায় কম্পিউটারে যাবতীয় ডাটা চলে আসে। গবেষণার জন্য অন্যতম সহায়ক যন্ত্র হচ্ছে এক ধরনের স্পেস ভেহিকল। সেটির নাম হচ্ছে চেজার। এছাড়া আসিরভ নামে এক ধরনের যন্ত্র এ গবেষণার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। মহাকাশে থাকা কোনো স্যাটেলাইটে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা এবং স্যাটেলাইটের বার্তা যথাযথভাবে ক্যাপচার করার সুবিধা এ গবেষকরা প্রদান করছেন। পাশাপাশি তারা স্যাটেলাইটের অবস্থান নির্ণয়েও সক্ষম। মজার বিষয় হচ্ছে পুরো কাজটিই হচ্ছে এক ধরনের রোবটিক সিস্টেমের সহযোগিতায় যেটি আসিরভ যন্ত্র এবং স্পেস ভেহিকল চেজারের মাধ্যমে কাজ করে। পৃথিবীতে বসে বিজ্ঞানীরা পুরো ডাটা বা বিশেষ অ্যালগারিদম কম্পিউটারে ইনপুট করেন। সেই ইনপুট আসিরভ ও চেজারের মাধ্যমে মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটে প্রেরিত হয়। এ অ্যালগারিদমই মূলত স্যাটেলাইটের থেকে প্রেরিত ডাটা ক্যাপচার করা, স্যাটেলাইটের অবস্থান নির্ণয় করা এবং স্যাটেলাইটে প্রয়োজনীয় বেশকিছু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 


গবেষণাটি স্পেনে বেশ বড় পরিসরে হচ্ছে। সেনার নামক একটি স্প্যানিশ কোম্পানি গবেষণার প্রয়োজনে যাবতীয় সহযোগিতা করছে। সেনারের অন্যতম প্রকৌশলী আন্দ্রে গেসভ এক সাক্ষাৎকারে জানান, স্যাটেলাইট গবেষণার ক্ষেত্রে রোবোটিক সিস্টেমের সহযোগিতায় করা এ উদ্ভাবন বিশেষ মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতের ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের জন্য এ ধরনের পদ্ধতিই বেশিমাত্রায় কাজে আসবে। তাই আমরা সেনারের পক্ষ থেকে এ গবেষণায় সহযোগিতা করে যাব। উল্লেখ্য, স্যাটেলাইট নিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা প্রচুর গবেষণা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে স্যাটেলাইট টেলিভিশনসহ নানারকম স্যাটেলাইটভিত্তিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে এ গবেষণাগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সায়েন্স ফিকশন লেখক ও বিজ্ঞানী আর্থার সি ক্লার্কের মাধ্যমে যে স্যাটেলাইট বিজ্ঞানের সূত্রপাত তা মানুষকে নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। তাই মানুষ স্যাটেলাইটের গুরুত্ব অনুভব করে এ সংক্রান্ত গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। গত কয়েক বছরে স্যাটেলাইট গবেষণায় রোবটিক সিস্টেমেরই শুধু আবির্ভাব ঘটেনি। মানুষ ন্যানোস্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করেছে। ন্যানো পর্যায়ের এসব স্যাটেলাইট নতুন নতুন নানা কৌশল বাস্তবায়নে তো কাজে লাগানো যাচ্ছেই পাশাপাশি স্যাটেলাইট গবেষণাকে দিয়েছে ভিন্নতর মাত্রা। এছাড়াও মহাকাশযান চিকিৎসাসহ নানা ধরনের জটিল বিষয়ে মানুষকে রোবোটিক সিস্টেম বা রোবোট সাহায্য করছে।

No comments:

Post a Comment