Monday, February 11, 2013

শাহবাগ প্রজন্ম স্কয়ার থেকে ‘অনলাইন আন্দোলন’



আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেস্ক :

খণ্ড খণ্ড মিছিল, বিক্ষোভ আর শ্লোগানে শ্লোগানে মুখোরিত শাহবাগ প্রজন্ম স্কয়ার। এ যেন জাতির নবজাগরণ। যত দূর চোখ যায়, কেবল মানুষ আর মানুষ। লাখো জনতার এই মহাসমুদ্রের কেন্দ্রবিন্দু শাহবাগের ‘প্রজন্ম চত্বরের’ নবজাগরণ মঞ্চ। একটি আন্দোলন। ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। উত্তাপ ছড়াচ্ছে কদিন থেকেই। এখন তা গণআন্দোলনের রূপ নিয়েছে। এ আন্দোলনের সূচনা কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম পথপ্রদর্শক ফেসবুকে। আর তা থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের কোটি কোটি অনলাইন পাঠকের কাছে। অনলাইন থেকে ছড়িয়ে গণমাধ্যমে। আর গণমাধ্যম থেকে সব শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে।
স্বাধীনতাপ্রিয় দেশপ্রেমিক মানুষ যারাই শাহবাগে যাচ্ছেন তাদের সবাইকে মিছিল আর স্লোগানে উজ্জীবিত না হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গত ৪ দিন-রাত টানা রাজধানীর শাহবাগের প্রজন্ম স্কয়ারেই চলছে বিভিন্ন শ্লোগান।রাত যতই গভীর হতে থাকে শ্লোগান আরও ঝাঁজালো হতে থাকে।গত মঙ্গলবার সন্ধা থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ সমাবেশে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, তরুণ প্রজন্ম, সংস্কৃতি কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।
দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনেও এ ধরনের গুণগত পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। গণমানুষের দাবি আদায়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশে সহিংসতা এবং রক্তপাত মোটেও প্রত্যাশিত নয়। শান্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় আলোচনাই এখানে গ্রহণযোগ্য মডেল হওয়া উচিত। এখন প্রতিমুহূর্তেই দেশজুড়ে অনলাইনভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমের সক্রিয় প্রতিনিধির সংখ্যাও যে বাড়ছে এ আন্দোলন তারও প্রমাণ রাখছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর কোনো অরাজনৈতিক ইস্যুতে এমন তারুণ্যের ক্ষোভ দেখা যায়নি।
যদিও এই বিক্ষোভে কমন শ্লোগান, ‘জয় বাংলা’ ও ‘তুই রাজাকার’। এছাড়াও পক্ষ নিলে রক্ষা নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলায়-রাজাকারের ঠাঁই নাই, জামায়াত শিবিরের রাজনীতি-আইন করে নিষিদ্ধ কর, দড়ি ধরে দেব টান-ফাঁসি দিয়ে নেব জান, নিজামী-মুজাহিদ ভাই ভাই-এক রশিতে ফাঁসি চাই, জামায়াত-শিবির রাজাকার/রক্ত চোষা জানোয়ার, এমন রায়ে কাঁদছে চোখ-আমার না হয় ফাঁসি হোক, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই-কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়-কাদের মোল্লার ঠাঁই নাই, কাদের মোল্লার কবর হবে-পাকিস্তানের মাটিতে, কাদের মোল্লা রাজাকার-একটা করে লাথি মার, বীর বাঙালির হাতিয়ার-গর্জে উঠুক আরেকবার, ‘জামায়াতের আস্তানা-ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও, সমঝোতার আস্তানা-ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, সাম্প্রদায়িকতার আস্তানা-ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও, রাজাকারের আস্তানা- ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও, জ্বালো-জ্বালো আগুন জ্বালো, পাকিস্তানের প্রেতাত্মা-পাকিস্তানেই ফিরে যা, লাখো শহীদ ডাক পাঠালো-সারা বাংলায় খবর দে, সারা বাংলা ঘেরাও করে জামায়াত-শিবির কবর দে, জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই নাই, আমাদের ধমনীতে-শহীদের রক্ত, শহীদের রক্ত-বৃথা যেতে দেব না, বীর বাঙালির ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা, একটা একটা শিবির ধর, সকাল বিকেল নাস্তা কর, জামায়াতে ইসলাম-মেইড ইন পাকিস্তান, কফিন রেডি-লাশ চাই, ক-তে কাদের মোল্লা-তুই রাজাকার তুই রাজাকার, ন-তে নিজামী-তুই রাজাকার তুই রাজাকার, ম-তে মুজাহিদ-তুই রাজাকার তুই রাজাকার, গ-তে গোলাম আযম-তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
http://www.ictworldnews24.com/শাহবাগ-প্রজন্ম-স্কয়ার-থ/
এ ছাড়াও দেশজুড়ে ফেসবুক, টুইটার এবং বাংলা ব্লগসাইটগুলোতে লাখ লাখ মন্তব্য আর অভিজ্ঞতার কথা লিপিবদ্ধ হচ্ছে। দেশে সামাজিক গণমাধ্যমের এ অভিনব দাবি প্রকাশকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা দেখছেন নতুন কৌশল হিসেবে। তবে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা এ আন্দোলনকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক চেহারা দিতে নারাজ।
শুধু দেশের প্রতিটি জেলা শহর নয়, প্রবাসেও চলছে সোচ্চার প্রতিবাদ। উদ্দেশ্য গণমানুষের দাবি আদায়। দেশের প্রায় প্রতিটি শহীদ মিনার চত্বরজুড়ে এ আন্দোলন দানা বেধেছে। আর তা চলছে অবিরাম গতিতে, বিরামহীন।
শাহবাগে আসা তরুণেরা বলছে, সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ জনসংযোগ ছিল না। কিন্তু এত বছর পরে হলেও দেশের স্বাধীনতার সম্মান রক্ষার্থে এবারে তারা এ আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকেই দেখবেন। এতদিন পরে হলেও অরাজনৈতিক ইস্যুতে দেশজুড়ে একটি সক্রিয় আন্দোলনকে বাস্তব রূপ দিয়েছে দেশের সোচ্চার অনলাইন পাঠকেরা। কোন ক্লান্তি নেই। অবিরাম গর্জে চলছে। ‘খুনি-ধর্ষক কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় না নিয়ে ঘরে ফিরবে না এই এই আন্দোলনকারীর কেউই

No comments:

Post a Comment