গাড়ি ছাড়া আধুনিক নাগরিক জীবনের একটি দিনও কল্পনা করা যায় না। তাই পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরিতে রয়েছে প্রকৌশলীদের অব্যাহত চেষ্টা। নানা উৎস থেকে নির্গত কার্বন গ্যাস ক্রমাগত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে চলেছে। গাড়ির ধোঁয়াও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইন। বায়ুকে গাড়ির জ্বালানিরূপে ব্যবহার করতে চান তাঁরা। তবে তরল বায়ু। স্বাভাবিক বাতাসকে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তরল করে সেটিকে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত তরলীকৃত নাইট্রোজেনের ধারণাটিকেই এখানে কাজে লাগাতে চান তাঁরা। আমরা যে বাতাসে নিঃশ্বাস নিই, এর ৭৮ শতাংশ হচ্ছে নাইট্রোজেন গ্যাস। একটা ভ্যাকুয়াম ফ্লাস্কে আঠালো ও নীল রঙের এক লিটার তরল নাইট্রোজেন মানে হচ্ছে ৭০০ লিটার স্বাভাবিক বায়ু। অর্থাৎ এটিকে ফ্লাস্ক থেকে বের করে দিলে তা নিমেষেই ৭০০ গুণ
ছড়িয়ে গিয়ে পৃথিবীর বাতাসে মিশে যাবে; কোনোরকম বায়ুদূষণ না ঘটিয়ে। সুতরাং তরল বায়ুকে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো গেলে সেই গাড়ির ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করবে না। তাঁরা জানান, প্রতিদিন নানা উৎস থেকে উৎপাদিত নাইট্রোজেনের মধ্যে প্রায় সাড়ে আট হাজার টন উদ্বৃত্ত হিসেবে বাতাসে মিশে যায়। এই নাইট্রোজেনকে তরলীকৃত করা হলে তা দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ছয় কোটি কিলোমিটার পথ চলার ব্যবস্থা করা সম্ভব। যুক্তরাজ্যের বর্তমান বিদ্যুৎ মূল্যের হিসাবে এক লিটার তরল নাইট্রোজেন উৎপাদনের জন্য মাত্র আড়াই থেকে সাড়ে তিন পেনির বিদ্যুৎ খরচ হবে। আর এ খরচ ভবিষ্যতে আরো কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। সুতরাং একদিকে সাশ্রয় আর অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষা- সব মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে গাড়ি চালাতে তরল বায়ু ব্যবহারের ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা।
উল্লেখ্য, নাইট্রোজেন গ্যাসকে তরল করে সেটিকে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনাটি ঘটে গেছে ১৯০২ সালে। ১৫ গ্যালন তরল বায়ু ব্যবহার করে মোট ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল সে সময় তৈরি করা গাড়িটি। এটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার। তবে তরল বায়ুর উৎপাদন ও সংরক্ষণব্যবস্থা, এটিকে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষ ধরনের ইঞ্জিন তৈরি- এমন নানামুখী জটিলতায় তখন সেই গাড়ির বাণিজ্যিকীকরণ হয়নি। তাই বলে থেমে নেই মানুষের প্রচেষ্টা। নানা ধরনের গবেষণা শেষে গত ৯ মে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল একাডেমী অব ইঞ্জিনিয়ারিং সম্মেলনে তরল বায়ুর ব্যবহারসম্পর্কিত তাত্তি্বক ও প্রায়োগিক খরচের তথ্য তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
http://www.ictworldnews24.com/পৃথিবীর-ভবিষ্যতের-জ্বালা/